কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন

SOHEL🌄

কাশির জন্য তুলসি পাতা খাওয়া প্রাচীনকালে আয়ুর্বেদিক হিসেবে ব্যবহার হতো । তুলসী পাতার রসে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল আছে যা সর্দি কাশির জন্য উপশম কার্যকারীতা । তো তুলসী পাতার গুনাগুন জানতে এই পোস্টটি পড়তে পারেন।

শিশু থেকে শুরু করে সব রকম বয়সের মানুষের ঠান্ডা সর্দি কাশির জন্য ওষুধ হল তুলসী পাতা । বাচ্চাদের কাশি হয়ে থাকলে আধা চামচ মধু দিয়ে তুলসী পাতা রস মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি ভালো হয়ে যায় এটি কাশির জন্য ভালো কাজ করে থাকে ।

পেজ সূচিপত্র কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

কাশির জন্য তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম
তুলসী পাতার ব্যবহার
কাশির জন্য তুলসী পাতাসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরী
কাশির জন্য তুলসির পাতা প্রস্তুত প্রণালী
তুলসী পাতা সেবনের নিয়ম
শিশুদের জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়মাবলী
তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়ার নিয়ম
ত্বকের জন্য তুলসী পাতার রস
তুলসী পাতার ক্ষতিকারক দিক সমূহ
উপসংহার

কাশির জন্য তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম

কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম হলো তুলসীর পাতাএক চামচ রস এবং আধা চামচ মধু দিয়ে মিশিয়ে শিশুদের খাইয়ে দিলে সর্দি কাশি ভালো হয়ে যায় । কিন্তু বহু গবেষণায় দেখা গেছে তুলসী পাতা এত উপকারিতা রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল অ্যান্টিভাইরাল এবং এন্টি ইনফিমেন্টারি যেটা কাশি সর্দি জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারী। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তুলসির পাতার রস কাজ করে না শুকনো এবং ফাঁপা কাশির জন্য দিনের বেলা এটি খেয়ে নিলে সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।

কাশির জন্য তুলসী পাতার রস খাওয়া সব ধরনের মানুষের জন্য খুবই উপকারী ।প্রথমে তুলসী পাতা কে থেত করে রস বের করে নিতে হবে এরপরে একটি পরিষ্কার কাচের বাটিতে রাখতে হবে তারপরে বোতলে থেকেও অর্গানিক মধু ওই বাটিতে রসের অর্ধেক পরিমাণ মধু ঢেলে মিশে প্রায় এক চামচ করতে হবে এভাবে শিশু থেকে বয়স্কদের পর্যন্ত রাত্রে বেলায় ঘুমানোর আগে খেয়ে নিলে দেখবেন অনেকটাই কাশি কমে গেছে।

তবে সর্দি কাশির জন্য সব সময় তুলসী পাতা কাজ করে না যেমন শুকনো কাশিতে ফাঁপা কাশির জন্য দিনের বেলায় এই ঘরোয়া ঔষধ বা আয়ুর্বেদিক খেলে অনেক গবেষণায় দেখা যায় এটি কাজ করে কম তবে রাত্রিবেলায় খেলে মধুতে পরিপূরক হিসেবে কাশির জন্য কাজ করে থাকে।

তুলসী পাতার ব্যবহার

একটি বা ২ তুলসী পাতা ২ চামচ মধু আধা চিমটি হলুদের গুঁড়া আধা চিমটি লং আধা চিমটি কালো গোলমরিচ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন এরপরে সেখানে রস বের করে নিন ৫ মিলি করে দিনে তিন থেকে চারবার খেতে হবে যেহেতু প্রতিটি উপাদানে রয়েছে গরম প্রকৃতি প্রায় দুই সপ্তাহ খাওয়ার মধ্যে এটি বন্ধ করে দেয়া উচিত অনেক সকালে উঠে তুলসী পাতার কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া খুবই ভালো তারপরে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে হালকা গরম পানি খাবেন । কৃষ্ণ তুলসী খাওয়া সবচাইতে ভালো ।

আরো পড়ুনঃআদার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন

কাশির জন্য তুলসী পাতাসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরী

কাশির জন্য তুলসী পাতা সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে যে প্রক্রিয়াটি তৈরি করা হয় সেটি হচ্ছে তুলসী পাতার ঘরোয়া সিরাপ । বিভিন্ন রকম উপকরণীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয় এ ভেষজ ঔষধ চলুন কি কি উপকরণ ব্যবহার করার মাধ্যমে এ ঘরোয়া কাশির এন্টিবায়োটিক তৈরি করা যায় জেনে নিই।

উপাদান	পরিমাণ	মন্তব্য বা নির্দেশনা
তুলসির পাতা	১ থেকে ২ টি	ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন
মধু	২ টেবিল চা চামচ	স্বাদ অনুযায়ী সামঞ্জস্য করতে হবে
হলুদের গুঁড়া	আদা চিমটি	প্রাকৃতিক এন্ট্রি ইনফ্লেমেন্টরি গুণের জন্য
লং বা গোলমরিচ	আদা চিমটি	গলায় ব্যথা ও কাশির উপশমে সহায়ক
আদা	এক থেকে দুইটি ছোট টুকরা	গলার ব্যথা ও প্রদাহ আমাদের সাহায্য করে

কাশির জন্য তুলসির পাতা প্রস্তুত প্রণালী

কাশির জন্য তুলসির পাতা প্রস্তুত করার যে নিয়ম রয়েছে সেটি এখন বর্ণনা করা হলো

প্রথমে তুলসির পাতা পরিষ্কার করে নিতে হবে ভালোভাবে পরিষ্কার করে পাতাটি ধুয়ে নিতে হবে কোনরকম যেন মাটির কণা না লেগে থাকে।

মিশ্রণ তৈরি করতে হবে এমন ভাবে তুলসী পাতা আদা দারুচিনি সহ এক সঙ্গে ব্লান্ড করে নিতে পারেন রস বের করে নিন এভাবে করে আলাদা রস বের করে নিতে হবে ছোট ছোট যেগুলো বীজ বা তুলসী পাতা আছে সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে

এবং পরিস্কার বাটিতে রস গুলো তুলে রাখতে হবে

তুলসী পাতা সেবনের নিয়ম

কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার যে নিয়মটি রয়েছে সেটি হল

দিনে দুই থেকে তিনবার পাঁচ মিলি করে এক চা চামচ রস গ্রহণ করুন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি প্রযোজ্য
রস খাওয়ার ৫ থেকে ১০ মিনিট পর গরম পানি পান করতে পারেন যাতে করে উপাদানগুলো কার্যকরী আরো দ্বিগুণ বাড়ে যায়
তুলসী পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে সাথে করে একটু হালকা গরম করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়
দারুচিনির গুঁড়া আদা কুচি করে পানি দিয়ে গরম করে ওই পানি তুলসির পাতার সাথে মধু দিয়ে মিশিয়ে খেলে খুব ভালো কাজ করবে
তুলসী পাতা সঙ্গে হালকা লবঙ্গ মিশিয়ে পানিতে গরম করে শুষ্ক গরমের সাথে মধু মিশিয়ে পানি পান করলে কাশি ভালো হয়ে যায়

শিশুদের জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়মাবলী

কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম বয়সের পার্থক্যে খাওয়াতে হবে শিশুদের জন্য এক রকম যুবকদের জন্য আরেক রকম এবং বৃদ্ধদের জন্য অন্যরকম নিয়ম আছে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে সর্দি কাশি জ্বর গলাফোলা এসব সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তাই শিশুদেরকে কিভাবে ঘরোয়া উপায় তুলসী পাতা দিয়ে কাশি নিরাময় করা যায় সে বিষয়টি বলা হবে। কি নিয়মে শিশুদের তুলসী পাতা রস খাওয়ানো যায় চলুন তা জেনে নিই ।

আরো পড়ুনঃহাতিশুড় গাছের মুল খাওয়ার ২০টি উপকারিতা

আদা দারুচিনি গুড় করে একসঙ্গে থেত করে মিক্স করে গরম পানিতে ৫ থেকে ৭ মিনিট ফুটিয়ে আবার ঠান্ডা করতে হবে আর এই পানি যদি কোন শিশুকে মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যায় তাহলে সবচাইতে ভালো কাজ করবে ।

একটা বিষয় হচ্ছে শুধু তুলসী পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে খাওয়ালে ভালো কাশির জন্য ভালো কার্যকারিতা পাওয়া যায়

এরপরও চিনি এবং তুলসির পাতার রস মিশিয়ে প্রতি ৫ মিলি বা এক চামচ করে দিনে তিন থেকে চারবার খাওয়ালে কাশি কমে যাবে

তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়ার নিয়ম

কাশি জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার অন্যতম একটি নিয়ম হচ্ছে কাঁচা পাতায় সুন্দর করে পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে কোন ময়লা না থাকে এবার ওই পাতাটি মধ্যে যে পারদ বা আইরন আছে সেটিকে সরাসরি চিবিয়ে খেয়ে নিতে হবে । এতে করে দাঁতের ক্ষয় রোধ কমে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে এনামেল নষ্ট হয়ে যায় তাই এই তুলসির পাতা কে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া সবচাইতে ভালো ,এতে করে পাতার জীবাণু দূর হয়ে যাবে ইনফেকশন থাকলেও সেটি দূর হয়ে যাবে তুলসির পাতা চা বানিয়ে খেলে সব উপকরনের রস চায়ের পানিতে লেবু দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে খেতে হবে তাহলে কাশি সর্দি থেকে আরাম পাবেন।

আরো পড়ুনঃদাতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথা কমানোর উপায়

ত্বকের জন্য তুলসী পাতার রস

কাশির জন্য যেমন তুলসী পাতার রস খাওয়ার নিয়ম রয়েছে সেরকম ত্বকের জন্য ব্যবহৃত তুলসী পাতার রসের নিয়ম রয়েছে এটার মূল কারণ হলো সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলা কারণ এখনকার মানুষ সৌন্দর্যের প্রতীক বাড়াতে চায় তো চলুন সৌন্দর্যকে কিভাবে বাড়ানো যায় জেনে নেই ।

ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে এই তুলসির পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ব্রণ যদি ফুলে বা লাল হয়ে যায় সেক্ষেত্রে তুলসীর পাতা বেটে তার সঙ্গে নিম পাতা বেটে একটু গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে লাগিয়ে দিন দেখবেন অনেকটাই ভালো হয়ে গেছে ।

ব্রণ দূর করার জন্য তুলসী পাতার রস এবং বেসন একসাথে মিশিয়ে ওই ব্রনের উপরে পেস্ট করে রেখে দিলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে দেখবেন আপনার ব্রণের দাগ চলে যাবে।

মুখের কালো দাগ গুলো এ তুলসী পাতা রস ব্যবহার করলে চলে যায় তুলসী পাতার রস ডিমের সাদা অংশের সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখের উপরে লাগিয়ে রাখলে এ কালো দাগ দূর হয়ে যাবে

অনেকের ত্বক জ্বালাপোড়া করে জ্বালাপোড়া রোধ করার জন্য মুখে তুলসী পাতা রস লাগাই দিলে অনেকাংশে স্কিনের জ্বালাপোড়া কমে যাবে শীতে

শীতে তাপ নিয়ে অনেক সমস্যা হয় উস্কো খুশকি হয়ে যায় এরপরে বিরক্তিকর মনে হয় এজন্য ১২ থেকে ১৫ টি তুলসী পাতা বেটে সাথে টক দই মিশিয়ে পেস্ট করুন মুখে ১৫ মিনিট রেখে দেন এরপর দেখুন ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে

উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য ত্বকে ১০ থেকে ১৫ টি পাতা রস বের করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে মাখুন দেখবেন এ প্যাকেজে খুব ভালো কার্যকারিতা পাবেন

তুলসী পাতার ক্ষতিকারক দিক সমূহ

অতিরিক্ত তুলসী পাতা রস খাওয়া যাবে না পরিমাণ মতো খাবেন তবে এর কিছু ক্ষতিকারক দিক রয়েছে চলুন সে বিষয়ে জেনে আসি

নারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধক এর কারণ হয়ে যেতে পারে

যারা অতিরিক্ত ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিল হয়ে যেতে পারে

তুলসী পাতার অতিরিক্ত আয়রন থাকায় দাঁতের ক্ষতি হতে পারে

আরো পড়ুনঃকিডনিতে পাথর হলে কি করতে হবে বা কিডনি পাথর গলায় কোন খাবার

এছাড়াও যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে গ্যাস্ট্রিক আলসারের মতো তাদের জন্য এটা খাওয়া সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ, না খায় বেটার ।

উপসংহার

কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম গুলো এই আর্টিকেলে বর্ণনা করা হলো । বর্তমান মানুষ সব সময়ই ওষুধের উপরে নির্ভর করে ।কিছু কিছু মানুষ ঘরোয়া উপায়ও অসুখ সেরে তোলে তবে ঘরোয়া উপায়ে কাশি সর্দি এগুলো তুলসী পাতা দ্বারা ভালো করা সম্ভব যদি সঠিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। সবরকম বয়সের মানুষেরই সর্দি কাশি হয়ে থাকে তবে অপরের নিয়ম অনুযায়ী সেবন করলে সর্দি কাশি ভালো হবে সর্দি কাশির জন্য তুলসী পাতা গণ্য করা হয় এটা আদি প্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে।

সুতরাং বলা যায় কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম মানব জাতির জন্য সর্দি-কাশির মহা ঔষধ যা তুলসী পাতাকে বলা হয়ে থাকে । আমি আশা করি যে এ তুলসী পাতা খেলে আপনার অনেকগুলো সমস্যার সমাধান এনে দেবে শুধুমাত্র সর্দি কাশির জন্যই নয় আরো অনেকগুলো সমস্যা যদি থেকে থাকে হালকা জ্বর বা শরীরে অন্যান্য সমস্যা গুলো সমাধান করে । এই আর্টিকেল কারো যদি ভালো লেগে থাকে শেয়ার করে দিবেন ধন্যবাদ।