চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে জানুন

সাকা হাফং সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মিয়ানমার বান্দরবান ভ্রমণ গাইডআমরা আজকের আর্টিকেলে চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে আলোচনা করব। আমাদের সঙ্গে থেকে বিস্তারিত পড়ে জেনে নিতে পারেন ।

চর কুরকি মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা জেলার চরফ্যাশনের কোল ঘেঁষে লুকিয়ে থাকা সুন্দর স্বর্গ। এর প্রধান সৌন্দর্যই হলো বিশাল ম্যানগ্রোভ বন।

পেজ সূচিপত্রঃচর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে জানতে পড়ুন

• চর কুরকি মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
• চর কুরকি মুকরি নামকরণ
• চর কুরকি মুকরিতে যা দেখবেন
• যাওয়ার সেরা সময় কখন
• চর কুরকি মুকরি কিভাবে যাবেন
• চর কুরকি মুকরি কোথায় থাকবেন
• চর কুরকি মুকরি কোথায় খাবেন
• সঙ্গে যা নিবেন
• আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
• শেষ কথা

চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

চর কুরকি মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য । ভোলা সদর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার আদুরে , সাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনা এবং তেতুলিয়া নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা এক জীবন্ত চিত্রকর্ম । বাংলাদেশের অন্যতম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য মধ্যে একটি।চর কুক্রি মুকরি নীল জলরাশির পাশাপাশি সবুজে ঘেরা দ্বীপ,মাথার ওপরে ঘন সবুজ মেঘে ঢাকা আকাশ,সৌন্দর্যের একরাশ অনুভূতি প্রকাশ করে থাকে।যা পর্যটনদের কাছে এক আকর্ষণীয় স্থান।

বহু  প্রাচীন চর কুরকি মুকরির ইতিহাস,  ৭০০ বছর আগে এই এলাকায় পর্তুগিজ জলদস্যুরা আস্থানা গেড়েছিল।সে সময় এই চরটি পানির নিচে বিলীন হয়ে যায়। আবার ১৯১২ সালে এই চরটি জেগে ওঠে। বর্তমানে এ জায়গাটি বিশাল পর্যটন কেন্দ্র ,যার নাম চর কুরকি মুকরি ভোলা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।

চর কুকরি-মুকরি নামকরণ

স্থানীয়দের পরিভাষায়

কুকরি শব্দের অর্থ হচ্ছে কুকুর

এবং মুকরি শব্দের অর্থ হচ্ছে বন্য ছাগল বা হরিণ জাতীয় প্রাণী

চর কুকরি-মুকরি নামকরণের অন্যতম প্রাচীন কারণ রয়েছে এক সময় এই চরে শুধুমাত্র কুকুর ও বন্য ছাগল  দেখা যেত এই কারণে এই চরের নামকরণ করা হয়  চর কুরকি-মুকরি ।

এখনো গহীন বনের ভিতরে কিছু প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় ।অন্যান্য বর্ণনায় বলা হয় দুটি পৃথক পৃথক চরের দ্বীপ ছিল । একটি হচ্ছে চর কুকরি অন্যটি হচ্ছে চর মুকরি সময়ের সাথে সাথে এই দুই দ্বীপ একত্রে মিলিত হয়ে যায় ।

 "ভৌগোলিক ভাবে মিলিত হওয়াকে একত্রে নাম দেয়া হয় চর কুরকি মুকরি"

আবার কেউ কেউ বলেন, এই চরে বিশাল আকৃতির বন্য কুকুর এবং বড় বড় ইঁদুরের দেখা মিলতো তাদের নাম অনুসারে এ চরের নামকরণ করা হয় চর কুরকি মুকরি ।

চর কুরকি মুকরিতে যা দেখবেন

চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটনকেন্দ্র। মনোমুগ্ধকর করার জন্য প্রকৃতি যথেষ্ট ।নিচে  বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হলো ।

ঘন ম্যানগ্রোভ বন

চর কুকরি-মুকরি সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হল ঘন ম্যানগ্রোভ বন । সূর্যের কিরণ ও বিশাল ঘন সবুজ বনের পাতার লুকোচুরি খেলা চারিপাশকে আলোয় মুখরিত করে । সমস্ত বনকে ছায়া আলোয় এক অপূর্ব জাদু সৃষ্টি করে।

আরো পড়ুনঃ ফুরমোন পাহাড় শুভ্র মেঘের স্বর্গ রাজ্য রাঙ্গামাটি ভ্রমণ গাইড 

নদীর পানির ঢেউ বিশাল গাছের শিকরে লেগে শিকড়গুলো জাগ্রত করে।মনে হয় যেন এক নিজস্ব প্রকৃতির স্থাপিতকৃতি, ঢেউয়ে ভেসে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলে গাছের শিকড়ে । 

পাখির মধুর কলতান ও বন্যপ্রাণী স্বর্গ

চর কুকরি-মুকরি পর্যটন কেন্দ্রটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি। ভোরবেলা ট্রেইলের সময়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মিষ্টি মধুর সুর কানে ভেসে আসে । ঘন কুয়াশা মধ্যে পাখির ডাক অসম্ভব সুন্দর্যের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে  মৌমাছি বক বন্য হাঁস কাকাতুয়া পাখিদের এক বিশাল মিলন মেলা।

কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল বেলার দৃশ্য

চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আকর্ষণ হল বনের মধ্যে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন দৃশ্য। বিশাল নদীর ধোঁয়াশা ও বনের মধ্যে  কুয়াশার ভেতরে লাফিয়ে চলে বানর আর শিয়াল। হরিণেরও দূরের দেখা পাওয়া যায়। আপনি ক্ষণিকের জন্য মনে হবে এক সবুজ রাজ্যে এসে গেছেন।

নদী এবং সাগরের মিলন স্থল

চর কুরকি মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পর্যটন কেন্দ্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সৌন্দর্য । নদী ও সাগরের সংযোগ স্থল। যখন সাগরের জোয়ার  আলতো করে এই চরকে ছুঁয়ে যায় ঠিক তখনই সাগরের গর্জন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শুনতে পাওয়া যায়।এত সুন্দর মিলনস্থল দেখা সত্যি খুব কম মানুষের ভাগ্যে মিলে । বাংলাদেশের খুব কম জায়গায় এরকম দৃশ্য দেখা যায়।

আরো পড়ুনঃতৈনখাল নদীর তীরে পাহাড়ি বনভূমির অপূর্ব সৌন্দর্যের মেলবন্ধন ভ্রমণ গাইড

সূর্যাস্তের রংধনু

চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় দৃশ্য  হল রংধনু সাত রং।  বিকেলে যখন সাগরের কোলে সূর্য ঢেলে পড়ে তখন সে আলো কমলা গোলাপি বেগুনি মোট সাতরঙ্গে আকাশে রং বদলায়। মনে হয় প্রকৃতি নিজে এক মহা উৎসব সাজিয়ে পর্যটকদের আহ্বান জানাচ্ছে।

যাওয়ার সেরা সময় কখন

চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা যাওয়ার সেরা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। "নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস" এ সময় শীতের হালকা আমেজ থাকে। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল মনোগ্রভ বনের আসল সৌন্দর্য দেখা মিলে।নদী ও সাগর দুই শান্ত প্রকৃতির হয় এবং আবহাওয়া ঠান্ডা আরামদায়ক থাকে । 

এছাড়া জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মার্চ এই তিন মাসে যেতে পারেন আবহাওয়া  একই থাকে।যাকে ফটো শুটের জন্য সেরা স্থান হিসেবে গণ্য করা হয় ।

চর কুকরি-মুকরি কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে ভোলার চরফ্যাশন যেতে হলে লঞ্চ কিংবা বাসে উভয়েই যেতে পারবেন। 

লঞ্চে যাতায়াত

ঢাকা সদরঘাট  থেকে লঞ্চে ভোলা দৌলতখান ইলিশা রুট হয়ে পৌঁছে যেতে পারেন ভোলায়

যেতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা 

কেবিন ১২০০ থেকে ২৫০০টাকা এসি সিঙ্গেল

ভোলা থেকে চরফ্যাশন ট্রলারে  যাওয়া যায় ১ থেকে ১.৩০ মিনিট সময় লাগে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা জনপ্রতি ভাড়া দিয়ে পৌঁছে যাবে চরফ্যাশনে

বাসযোগে

ঢাকা থেকে সরাসরি বাসযোগে ভোলা যেতে পারবেন বাসের নাম গুলো হল

সায়ার

হানিফ

ইকোনো

বিপি

টাঙ্গাইল এক্সপ্রেস

ঢাকা ভেদুরিয়া ফেরিঘাট নদী পাড়ি দিয়ে ভোলা সদর সেখান থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে চরফ্যাশন

মোট যেতে সময় লাগে ১০ থেকে ১১ ঘন্টা

লঞ্চ ভাড়া

তৃতীয় শ্রেণীর টিকিট ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।

চর কুকরি-মুকরি কোথায় থাকবেন

চর কুরকি মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা ভ্রমণে চরফ্যাশনে থাকার ব্যবস্থা আছে।নিচে কিছু উন্নত মানের হোটেল এন্ড রিসোর্ট এর নাম তুলে ধরা হলো ।

চরফ্যাশন টাউন হোটেল ভালো মানের রুম পাবেন এয়ারকন্ডিশন পরিবারসহ থাকার উপযোগী

হোটেল নাইস স্টার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রুম সাশ্রয় ভরা একেবারে বাজারের কাছাকাছি থাকতে পারবেন

হোটেল খান প্যালেস পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতে পারবেন নরমাল রুম ও লাক্সারি রুম আছে

চর ফ্যাশন গেস্ট হাউস সরকারি রেস্ট হাউস আগেই যোগাযোগ করে বুকিং নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ বারুয়াকোনা মহাদেও নদী অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি কমলাকান্দা নেত্রকোনা 

রুম ভাড়া

 চরফ্যাশনে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা রুম ভাড়া

ইকো কটেজের ৫০০ থেকে বারোশো টাকা রুম ভাড়া

হোমেস্ট ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া।

এছাড়াও  চর কুরকি মুকরি হোমেস্ট আছে , যেখানে থাকতে পারেন । স্থানীয়দের পরিচালনা দ্বারা সংরক্ষিত খরচ কম বাথরুম সেবা খুব বেসিক ।

চর কুকরি-মুকরিকোথায় খাবেন

চর কুকরি-মুকরি ভ্রমণের সময় কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট আছে । নিচে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট গুলোর নাম তুলে ধরা হলো

দ্য সাউদার্ন পট রুপ টপঃ চা কফি খানাবেনা সব রকমের ব্যবস্থা রয়েছে আরামের জায়গা।

ফুসিওন ক্যাফি লাইভঃ হালকা খাবার বেকারি ও জুস ভ্রমণের জন্য একটু রিলাক্স করার ভালো জায়গা।

মনসুর টি স্টলঃ চা নাস্তা ফাস্টফুড সস্তা এবং দ্রুত খাবার পছন্দ হবে।

চরে বড় রেস্তোরাঁ কম পাবেন তাই চরফ্যাশনে খাবার খেয়ে নেবেন ।

দুপুরের ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে খাওয়া কমপ্লিট ।

ভাত মাছ মাংস মুরগি ভর্তা ভাজি ডিম ও ডাল খেতে পারবেন।

সঙ্গে যা নিবেন

চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা ভ্রমণে সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে হবে ।  চলুন নিচে  একটি তালিকা জেনে নেওয়া যাক

এনআইডি কার্ডের ফটোকপি অথবা লাইসেন্স

নগদ টাকা

মোবাইল ফোন পাওয়ার ব্যাংক

হালকা ব্যাকব্যাক নৌকা ভগবানের জন্য সুবিধা হবে ।

জুতা

হালকা শীতের কাপড়

সানস্ক্রিন

সানগ্লাস

স্যানিটাইজার

প্রাথমিক ওষুধ পত্র 

আরো পড়ুনঃপ্রান্তিক লেক অপরূপ প্রকৃতিক বিস্ময় বান্দরবান ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে জানুন

মশা নিরোধক স্প্রে 

শুকনা খাবার ও নিরাপদ পানি

ক্যামেরা ও ড্রোন ব্যবহার করতে পারেন ।

আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

তারুয়া সমুদ্র সৈকত বিশাল সমুদ্র সৈকত ভোলা জেলা চরফ্যাশন অঞ্চলে অবস্থিত

চর কুকরি-মুকরি ম্যানগ্রোভ বন প্রধান আকর্ষণ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যানগ্রোভ বন

চরফ্যাশন নদীর মোহনা অসম্ভব সৌন্দর্যের অধিকারী ফটোশুদের জন্য সেরা স্থান

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দ্বীপ গুলো দেখতে পাবেন নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে কাছাকাছি যেতে পারবেন

স্থানীয় মাছের বাজার এখানে বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি মাছের দেখা মিলবে

ছোট ইকো রিসোর্ট প্রকৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে তৈরি।

সতর্কতা অবলম্বন

লাইভ জ্যাকেট সঙ্গে রাখবেন

গাইডের কথা মত চলবেন

জোয়ার ভাটা দেখে ভ্রমণ করবেন

রুম বুকিং এর সময় রেট জেনে বুকিং করবেন

একা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ভ্রমণ করবেন না

অযথা ময়লা ফেলবেন না

অপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম থেকে বিরত থাকবেন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে চর কুরকি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভোলা ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে  সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে । আশা করি বুঝতে পেরেছেন। কিভাবে যাবেন ,কোথায় থাকবে,কি কি খাবেন,ভাড়া কত,  সম্পূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো। এরপরও যদি আপনাদের কাছে কোন রকমের প্রশ্ন  থাকে। তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আপনাদের  তথ্যের সঠিক উত্তর দিয়ে উপকৃত করা হবে ।

চর কুকরি-মুকরি আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে প্রিয়জনদের কাছে শেয়ার করে দিবেন । তিনারা যেন অবসর সময় এই জায়গাগুলোতে ঘুরে আসতে পারেন।তাই আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে সঙ্গে থাকুন। যেন নতুন আর্টিকেলগুলো সবার আগে পেতে পারেন।এতখন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আল্লাহ হাফেজ।